একটা কুয়াশার মত পরদা যেন সরে গেল চোখের সামনে থেকে। ধীরে, অতি ধীরে আচ্ছন্নভাব থেকে উঠে আসছে নীল। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো সমস্ত কিছুকেই যেন একটা বায়বীয় পরিমণ্ডল গ্রাস করে রেখেছে। আলাদা করে কিছু আর চোখ ছুঁয়ে যাচ্ছে না। তবু সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে চেতনায় ফিরে আসার। চেষ্টা করছে, করেই যাচ্ছে। হাত বাড়াতে চাইছে ছুঁয়ে দেখার জন্য। উঠছে না হাত, ভারী, অবশ। অবশ সমস্ত শরীরটাই। তবু তার ভারী চোখ বাতাসের পর্দা ছুঁয়ে ছুঁয়ে আস্তে আস্তে ঘুরছে। মাথা! ও হ্যাঁ মাথার দিকে তো মন যায়ই নি এতক্ষণ। সেখানের ভার আবার বড় ছড়ানো। মাইলের পর মাইল ধরে আঁটা মাথার ভিতর কিসের যেন দুশ্চিন্তা, আবার বড় নিশ্চিন্তি! সব যেন তালগোল পাকিয়ে যায়। নীল তবু হাল ছাড়ে না। সইয়ে সইয়ে মনে করতে চায়- কোথা থেকে যেন এসেছে সে? কোথায় যাবার কথা ছিল? কিন্তু যাওয়া তো হল না, বড় দেরী হয়ে গেল যে! তবু কিছু মনে পড়ে না। আবার আচ্ছন্নতা চেপে আসে। ছেয়ে যায় সুপ্তি।
কতক্ষণ পরে কে জানে, আবার চোখ মেলে নীল। আবার অভ্যস্থ হবার চেষ্টা করে পরিবেশের সাথে, আবার নিজের সাথে যুদ্ধ, আবারও সেই আচ্ছন্নতার অতলে তলিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই বিদ্যুচ্চমক- ‘মিঃ রয়, মিঃ রয়।‘ বায়বীয় স্তর ভেদ করে সংবাহিত কথাগুলি তার মস্তিস্কের একটা জানলা খুলে দেয়। সে নিজেই তো নীলার্ক রায়। তবে কি তার উদ্দেশ্যেই এই ডাক? পুনরাবৃত্তির সাথে সাথেই তাই সে চেষ্টা করে সাড়া দিতে, কিন্তু তার বাগযন্ত্র- দাঁত, মুখ, জিভ বুঝি বা বরফ! কোন ব্যবহার সম্ভব নয় আর তাদের। হঠাৎই বায়বীয় পরিমণ্ডলে কিছু কি রদবদল ঘটে? একটি মুখ ঝুঁকে আসে অধীর আগ্রহে। ‘ Mr, Roy, can you hear me?’ আবারও সে অসহায় এর উত্তর দিতে। শুধু অনেক … অনেক … অনেক চেষ্টাকে সাধ্য করে, অনেক প্রাণশক্তিকে একত্র করার পর কেবল চোখের পাতায় মৃদু এক তিরতিরে কাঁপন তুলতে পারে। শুনতে পায় সেই আগ্রহী মূখের উল্লসিত চীৎকার, ‘ ……… Oh Christ! He is responding.’
এরপর কখন কি প্রক্রিয়ায় কোথায় নল খোলা, লাগানো, ওষুধ গেলানো, সরানো, শোয়ানো, ফেরানো হয়েছে নীল কিছুই জানে না। শুধু একটিই অনুভব বেজেছিল সারাক্ষণ ধরে। তার শরীরের সমস্ত জোড়ের অসাড়তা ভেঙে যেন নদীর মত কুলকুল করে বেরিয়ে আসছে অনন্ত প্রাণ।