top of page
Writer's pictureGeetali Sen

আলাদা পৃথিবী - পর্ব ৩



ওতো কারও সামনেই আর আসতে পারে না। আর রিমঝিমের মত একটা ছোট্ট মেয়ের কথা বিশ্বাসও যে করে না কেউ। তাই কারও কাছেই আর টুপটুপের কথা বলে না রিমঝিম। সেই ভেলোরে যাবার পর থেকেই কেমন যেন হয়ে গেল টুপটুপ। তারপর থেকে আর স্কুলে যায় না সে। শৌনক স্যার আঁকা শেখাতে এলেও ডাকে না আর টুপটুপকে। খালি রাতে পুতুল খেলার সময়েই রিমঝিমের মনে হয় টুপটুপের কিচ্ছু হয়নি, কিচ্ছু না। একদম আগের মতই আছে।

-এই সংযুক্তা, বেল বেজে গেছে তো।

দানিকার ডাকে রিমঝিম চমকে উঠে নিজের সিটে এসে বসে। গালের ওপর গড়িয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছে নেয় হাত দিয়ে।

-কি রে টিফিন খাসনি? খেলতে গেলি না কেন?

-এমনি।

ম্যামের পড়া শুনতেও একদম ভালো লাগছিল না রিমঝিমের। হঠাৎ শোনে ম্যাম পড়াচ্ছেন- খোকা দুষ্টুমি করে চাঁপার গাছে ফুল হয়ে ফুটে আছে। মা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে,

-খোকা কোথায় ওরে?

এই শুনে সাড়া না দিয়ে খোকা শুধুই চুপটি করে হাসছে। মিনতী কাম্মাও ( কাকিমাও ) তো এখন খালি কাঁ

দে আর কাঁদে। ভাবে- কোথায় যে লুকিয়েছে টুপটুপ! আর টুপটুপ তো খালি তার কাছেই এসে বসে বসে হাসে। কিন্তু ওই যে-

আবার আমি তোমার খোকা হবো,

গল্প বলো তোমায় গিয়ে কবো।

সত্যিই তো টুপটুপ কি ওইরকম কুয়াশা থেকে আবার আগের টুপটুপ হয়ে যেতে পারে না? তন্ময়কাকুকে বলতে পারে না- বাবা গল্প বলো। কাকু যে রোজ অফিস থেকে ফিরে মেয়েকে গল্প শোনাতে বসে যেত। এখন কাকু কি করে কে জানে।


কখন যে ম্যাম ক্লাস শেষ করে চলে গেছেন দেখেই নি রিমঝিম। পরের পিরিয়ড গেমসের।রিমঝিমের মনে হল আগের দিন ম্যাম পড়িয়েছিলেন-

আজকে আমার ছুটোছুটি লাগল না আর ভালো।

সত্যিই তো। ভালো লাগে না ‘সী স’ , ভালো লাগে না স্লীপ। স্লীপের পাশে ঘাসঢাকা জমিটায় বসে রইলো সারাক্ষণ। আজ কী আসবে টুপটুপ? রোজ কিন্তু আসে না। কেন? এখন তো আর পড়া নেই, কিংবা ছবি আঁকা? কত দিন মিথ্যেই রিমঝিমের ঘুম ভেঙে গিয়ে মনে হয়েছে টুপটুপ বুঝি ডাকছে, কিন্তু প্যাসেজে ছুটে গিয়ে দেখেছে না, কেউ না। আজ কিন্তু টুপটুপ এলেই সে বলবে কাম্মার কাছে একবার যেতে। তাহলে কাম্মা আর কাঁদবে না।


আগেও তো তারা রাত্রে এরকম খেলত। বড়দের কাছে শুনেছে টুপটুপের হার্টে কী একটা অসুখ ছিল। তাই সে কোনও দিন দৌড়ে ছুটে খেলতে পারত না, স্কুলে স্পোর্টস করতে পারত না। লিফটে ওঠানামা করে খালি স্কুলটুকু করে বাকি সময় গল্পের বই পড়ত কি কম্পিউটারে গেমস খেলত আর শৌনক স্যারের কাছে দু’জনে একসাথে আঁকা শিখত। টুপটুপের জন্যই রিমঝিমও খেলতে যেত না নীচে। পাঁচতলায় রিমঝিমদের দুটো ফ্ল্যাট পরেই যে কানেক্টরটা আছে সেটা দিয়ে সোজা টুপটুপদের ফ্ল্যাটে চলে যাওয়া যায়। টুপটুপরা ভেলোরে যাওয়ার পরে একদিন রাত্রে পড়াশোনার শেষে শুধু অভ্যাসের বশেই টুপটুপের বাড়ি যাচ্ছিল রিমঝিম। মনেই ছিল না যে ওরা নেই। হঠাৎ সে দেখে ওই বন্ধ ফ্ল্যাটটার সামনে অন্ধকার কানেক্টরে দাঁড়িয়ে টুপটুপ তাকে হাসিমুখে ডাকছে। সে ছুটে ধরতে যেতেই কানেক্টরের বিপজ্জনক দিকে সরে গিয়েছিল টুপটুপ।

তারপর??


1 view0 comments

Recent Posts

See All

Comentários


bottom of page