top of page
Writer's pictureGeetali Sen

ভাড়া বাড়ি - পর্ব ১


ইয়র্কশায়ারে নতুন অফিসে যোগ দেওয়ার পর সায়ন খুব মুশকিলেই পড়ে গেল। যে সময়ে তার ডিউটি শেষ হচ্ছে, তখন আর টিউব ট্রেন ধরে তার পুরোন বাড়িতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাহলে এখানেই কোন থাকার ঘর খুঁজতে হবে। অফিসেও কয়েকজনকে বলেছে ভাড়া বাড়ির খোঁজ করতে, কিন্তু মুশকিল হল সায়ন নিজে তো তেমন কাউকেই চেনে না যে পাঁচজনকে বাড়ি খুঁজে দিতে বলবে। তো তার মধ্যে এডিথ বলে যে মেয়েটি একাউন্টস ক্লার্ক সে সেদিন এসে জানাল যে, ঘর একটা পাওয়া গেছে বটে, কিন্তু একটু দেখেশুনে নিতে হবে। দেখেশুনে নেওয়া আবার কি? বাড়ি ভাড়া বাড়ি ভাড়া। একটা ঘরের সাথে কিচেন, বাথরুম থাকলেই হল।

  • না, না ওই বাড়িতে কাহিনী আছে। একটু তো তোমাকে দেখতে যেতে হবে।

  • -যাঃ, এখানেও এসব চলে নাকি? সেই প্রাকৃত – আতিপ্রাকৃত ঘটনার ধরাছোঁয়া খেলা!

  • -না, না তা বলছিনা । তবে থাকবে তো তুমিই। তাই একটুখানি নিজে দেখে নিলেই ভালো হয় না কি?

  • ঠিক আছে।। দেখতে যাবো তাহলে। কিন্তু আমার তো সময় সেই আফিসের পরেই। এই করতে গিয়ে ইয়র্কশায়ারের লাস্ট ট্রেনটাই যাবে মিস হয়ে। তখন আবার রাতে থাকব কোথায়?

  • কেন বাড়ি পছন্দ হয়ে গেলে তুমি ওখানেই থেকে যেতে পারবে। পরে নাহয় তুমি জিনিসপত্র এনো।

  • আরে সে তো পরের কথা।

এরকম কথাবার্তার শেষ। সায়ন আফিস ছুটির পর টিউব ট্রেন ধরে সোজা গিয়ে হাজির হল ফ্রেডরিকের বাড়িতে। প্রথম দেখাতেই ওর যা মনে হল হ্যাঁ পরিবেশ বলতে হবে বটে। নিচু এক লেকের সামনে বরফঢাকা বন , রাস্তার এপারে এক ছড়ানো ছিটানো দোতলা বাংলো বাড়ি। অবশ্য বাড়িটা লেকের এপারে না হয়ে অপারে হলেও কিছু ক্ষতি হত না। যা পুরু বরফ লেকের ওপর দিয়েই হেঁটে চলে যাওয়া যেত।

বাড়ির মালিক যে বৃদ্ধা মহিলা, তিনিও থাকেন কাছেই। এডিথ নিয়ে গেল সায়নকে তাঁর কাছে। যেতে যেতে সায়ন জিজ্ঞাসা করল এডিথকে, আচ্ছা, মালকিন তাঁর নিজস্ব বাড়িতে না থেকে আন্য জায়গায় থাকেন কেন? -ভাড়া দেবার জন্য বাড়ি খালি করতে হবে না?

দরজা খুলল একটি বছর পঁচিশের মেয়ে। তার দিদিমার কাছে নিয়ে গেল সায়নদের। সায়নের কিন্তু মনে হল তারা যেতে বৃদ্ধা যেন কিছুটা অস্বস্তির মধ্যেই পড়ে গেলেন। কি জানি কেন, তিনি কথাও বলছিলেন খুব ধীরভাবে, থেমে থেমে। তাই প্রাথমিকভাবে বৃদ্ধাকে অসুস্থ মনে হলেও পরে কিন্তু বোঝা যায় যে দুর্বলতা তাঁর মনে। শরীর কিন্তু বয়সের তুলনায় সুস্থ সবলই আছে। এবং লোকজনের সাথে মেলামেশায় তিনি কিছুটা পরাঙ্মুখ। তাঁর নাতনীর নাম জেনিথ। সে বোধহয় বাড়ির মালিক বলে নাম কা ওয়াস্তে তার দিদিমার সাথে পরিচয়টুকুই করালো, কিন্তু কথাবার্তা সব সে-ই বলল। আর সায়নের মনে হচ্ছিল যে, এই ব্যাপারে সে বেশ দক্ষ। আর কেন জানিনা তার এটাও মনে হচ্ছিল যে এই কাজটা, মানে আর কি বাড়ি ভাড়া দেবার খদ্দেরদের সাথে সে প্রায়ই কথাবার্তা বলে থাকে। হঠাৎ আবার সায়নের এটাও মনে হল – তাই তো, কেন? বাড়ি ভাড়ার কথা প্রায়ই বলে কেন? তাহলে কি .....

হ্যাঁ, সেই কি যেন একটা বলছিল না এডিথ? সেই যে অতিপ্রাকৃত না কি সব ব্যাপারস্যাপার আছে? ওঃ হো সে নিজেও কি ওই সব বিশ্বাসে আটকা পড়ল নাকি?

তো দিদিমার পরিচয় দিতে গিয়েই কিছু পারিবারিক কথার মধ্যে যেতে হল জেনিথকে। মিসেস মরলিন অর্থাৎ তার দিদিমার জীবনের প্রথম দিকটা মোটামুটি সুখে কাটলেও প্রৌঢ়ত্বে এসে তাঁর জীবনটা যেন একেবারে হঠাৎই তছনছ হয়ে যায়। অজানা জ্বরে তাঁর মেয়ে আর জামাই – এর জীবনদীপ অকস্মাৎ নিভে যায়। বেঁচে থাকে তাদের দশ বছরের মেয়ে জেনিথ। সেই থেকে তিনি নিজেরর শোক ভুলে তাঁর এই শিবরাত্তিরের সলতে একমাত্র নাতনীটিকে তিল তিল করে বড় করে তুলেছেন। কিন্তু তখনই ছেড়েছেন ওই বাড়ি। কারণ হিসাবে জেনিথ বলল জে, তিনি নাকি মেয়ে-জামাইয়ের স্মৃতির মাঝে আর থাকতে পারছিলেন না। তবে সায়নের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিন্তু জানান দিল যে, সম্ভবত নিছক স্মৃতির ভারেই প্রস্থান নয়, অন্য কোন কারণ নিশ্চয়ই আছে; নাহলে কি কেউ নিজের বাড়ি ছাড়ে? যাই হোক, বাড়ি ছাড়লেও তো তাঁরা বাড়িটাকে ব্যবহার করতে ছাড়ছেন না, আর সেই ব্যবহারের দাম ধার্য হল ৮০০ পাউন্ড।

26 views2 comments

Recent Posts

See All

2 Comments


Geetali Sen
Geetali Sen
Apr 27, 2023

অনেক ভালবাসা নিস. এবার থেকে নিয়মিত পর্বগুলো আসবে.

Like

kundumanjula6
Apr 25, 2023

Interesting.. .Next part r janno apekha .......

Like
bottom of page